বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে সুনামগঞ্জ ও সিলেটে । তবে দুর্গতদের খাবার সঙ্কট এখনও আছে। ত্রাণ বিতরণে গতকাল বুধবার ওই এলাকায় যাওয়া বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে জলমগ্ন এলাকাগুলোকে একেকটি দ্বীপ মনে হচ্ছিল। তবে দ্বীপের মতো দেখা সেই বাড়িগুলোর উঠান স্যাঁতস্যাঁতে হলেও দেখা যাচ্ছিল, যেখানে দুদিন আগেও পানি ছিল বলে সেখানে টানা ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা বিমানসেনারা জানান।

হেলিকপ্টারের শব্দ শুনেই ঘরগুলো থেকে মানুষ বেরিয়ে আসছিলেন উঠানে, হাত বাড়াচ্ছিলেন ত্রাণের জন্য। সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি ছিল না। বিমানবাহিনীর বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি তাহিরপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চারটি স্থানে ত্রাণ বিতরণ করে। পানিরোধক আবরণে মোড়ানো প্যাকেটে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর সঙ্গে দিয়াশলাইও দেওয়া হয় দুর্গতদের জন্য। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিলেট ও সুনামগঞ্জের দুর্গম অঞ্চলে চারটি হেলিকপ্টার ও দুইটি বিমানের মাধ্যমে বুধবার ৮০০ প্যাকেট ত্রাণ বন্যা দুর্গতদের দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

বেল-২১২ হেলিকপ্টারটি শ্রীপুর, চাঁনবাড়ি, জয়শ্রীবাজারের চারটি প্রত্যন্ত স্থানে ত্রাণ বিতরণ করার পর সিলেটের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে। এ সময় হেলিকপ্টার দেখে অনেকেই ঘর থেকে বের হয়ে ভেজা উঠানে দাঁড়িয়ে সাহায্যের জন্য হাত নাড়ছিলেন। অনেকে ভবনের ছাদে, অনেকে পানি নেমে যাওয়া খালি স্থানে দাঁড়িয়েও ত্রাণ চাইছিলেন। হেলিকপ্টার থেকে নিচে ওইসব ঘরবাড়ি-উঠান দ্বীপের মতো দেখাচ্ছিলো। অনেক জায়গায় সড়কের আভাসও মিলছিল।

অনেক এলাকায় দেখা গেল জেগে ওঠা সড়ক ভেঙে একপাশ থেকে আরেকপাশে যাচ্ছে পানি। কয়েকটি স্থানে সেতুর খুব কাছাকাছি পানির তোড়ে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ছোট ছোট যানবাহন আটকে থাকতে দেখা যায়। আবার কিছুদূর পর্যন্ত সড়ক দেখা গেলেও, কিছু জায়গায় সড়ক এখনও পানির নিচে। যেসব স্থানে পানি কিছুটা নেমে রাস্তা ও সেতু জেগে উঠেছে, সেখানে অনেকে ভেজা ফসল ও বসতবাড়ির মালামাল শুকাতে দিয়েছেন। হেলিকপ্টারটি একটি ‘স’ মিলের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা গেলো, পানি নেমেছে কিন্তু কাঠের বড় বড় গুঁড়ি সব এলোমেলো।

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় বুধবারও পানি দেখা গেছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চলে ঘরের ছাদে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায়নি। পানি কিছুটা নামলেও সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বুধবারও পুনঃস্থাপন সম্ভব হয়নি।

বেল-২১২ এর বৈমানিক উইং কমান্ডার মো. এহতেশাম জানালেন, তিনি রোববার থেকে প্রতিদিন এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন। তার দেখায়, বন্যা পরিস্থিতি আগের কয়েক দিনের তুলনায় এখন অনেক ভালো। পানি অনেক কমেছে। আগে ঘরগুলো পানিতে ভরা ছিল কিন্তু আজ অনেক এলাকায় মাটি দেখা যাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সিলেট অঞ্চলে বন্যার পানি এখন কমছে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে প্রবল বৃষ্টিপাতের প্রভাবে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত সপ্তাহে বর্ষার শুরুতেই ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031