প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনকাঠামো নেই। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর, এমনকি গ্রামপর্যায়েও অনেক ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। মালিকপক্ষ যে যার খুশিমতো তাদের বেতন-ভাতা দিয়ে থাকেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা। তবে এবার তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরির আওতায় নিয়ে আসতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিগগিরই স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে মজুরিকাঠামো নির্ধারণ করবে।

জানা গেছে, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছাড়াও আরও ছয় খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরির আওতায় নিয়ে আসতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শ্রম অধিদপ্তরও আরও সাত খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরিকাঠামো নির্ধারণের জন্য কাজ করছে।

সম্প্রতি দৈনিক মজুরি ৩শ টাকা করার দাবিতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় আন্দোলন করেন চা-শ্রমিকরা। চা-বাগানগুলোতে চলে ধর্মঘট। এমন পরিস্থিতিতে চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তার আগে দীর্ঘদিন ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করছিলেন চা-শ্রমিকরা। সে হিসাবে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি

বাড়ে ৫০ টাকা। এর সঙ্গে প্লাকিং বোনাস (বাড়তি পাতা তোলার জন্য অর্থ), উৎসব ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিলসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর সঙ্গে শ্রমিকদের বার্ষিক ছুটি ও অসুস্থতাজনিত ছুটিও বাড়বে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে চা-শ্রমিকদের ভর্তুকি মূল্যে রেশন সুবিধা বাড়ানো, চিকিৎসা সুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন, পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ, গো-চারণভূমি বাবদ ব্যয়, বিনামূল্যে বসতবাড়ি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ শ্রমিককল্যাণ কর্মসূচি বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কিছু বাস্তবায়ন হলে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি সাড়ে চার শ থেকে পাঁচ শ টাকার মতো পড়বে।

এদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা এখন বেশি ওভারটাইম করছেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক শ্রমিকদের বেঁচে থাকার মতো ব্যয়নির্বাহে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকনেতারা। সম্প্রতি রাজধানীতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এ দাবি উঠে আসে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিভিন্ন স্তরের শ্রমিকনেতা এবং মালিক সংগঠন ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে অন্যান্য খাতের শ্রমিকরাও যে কোনো সময় আন্দোলনে নামতে পারেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি নৌশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি ওঠে। শ্রমিক ও নেতারা নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ ১২ লাখ টাকা নির্ধারণের দাবি করেছেন।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930