বিদেশি গিয়ারলেস ভ্যাসেলের বার্থিং সংকট প্রকট হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার নিয়ে আসা । প্রয়োজনীয় জেটির অভাবে বার্থিং না পাওয়া জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে অলস ভাসতে হচ্ছে। এতে আমদানি খরচ বাড়ার পাশাপাশি বন্দরের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ এবং ইউরোপীয় জাহাজের জন্য দুটি জেটিতে প্রায়োরিটি বার্থিং দেয়ায় গিয়ারলেস জাহাজগুলোকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। দেশের সমুদ্র বাণিজ্য ঠিক রাখার স্বার্থে গিয়ারলেস জাহাজের বার্থিং সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের শিপিং সেক্টরে দুই ধরনের কন্টেনার জাহাজ রয়েছে। নিজের কন্টেনার ওঠানামার জন্য যেসব জাহাজের নিজস্ব ক্রেন নেই সেগুলোকে গিয়ারলেস এবং যেগুলোর নিজস্ব ক্রেন আছে সেগুলোকে গিয়ারড ভ্যাসেল বলা হয়। গিয়ারলেস ভ্যাসেলে ক্রেন স্থাপনের জন্য জায়গা নষ্ট হয় না। ফলে বেশি কন্টেনার পরিবহন করা সম্ভব হয়। আবার ক্রেনের মূল্য বাবদও জাহাজ মালিকের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হয়। অপরদিকে গিয়ারড ভ্যাসেলে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ক্রেন স্থাপন করতে হয়। এতে জাহাজের বড় একটি জায়গা ব্যবহৃত হয়। ফলে গিয়ারলেস ভ্যাসেলে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় পণ্য পরিবাহিত হয়। পণ্য পরিবহন খরচ কমাতে আমদানিকারকরা গিয়ারলেস ভ্যাসেল পছন্দ করেন। তবে গিয়ারলেস ভ্যাসেলের সমস্যা হচ্ছে, নিজস্ব ক্রেন না থাকায় এগুলোকে কন্টেনার ওঠানামার জন্য বন্দরের ক্রেনের ওপর নির্ভর করতে হয়। যেসব বন্দরে গ্যান্ট্রি ক্রেন নেই সেখানে গিয়ারলেস ভ্যাসেল যায় না। বন্দরের যেসব জেটিতে গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে গিয়ারলেস ভ্যাসেল কেবলমাত্র সেসব জেটিতেই বার্থিং নিতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচলকারী ৯০টি ভ্যাসেল কন্টেনার পরিবহন করে। এসব ভ্যাসেলের মধ্যে ৪৫টি গিয়ারলেস। কী গ্যান্ট্রি ক্রেন আছে এমন জেটিতে ওইসব জাহাজকে বার্থিং নিতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে সাতটি জেটিতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। এর মধ্যে সিসিটি ১ ও ৩ নম্বর জেটি এবং এনসিটির ৫টি জেটি। উক্ত সাতটি জেটির মধ্যে একটি পানগাঁও টার্মিনালের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নির্ধারিত। অপর একটি জেটি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের জন্য নির্ধারিত। এর বাইরে ইউরোপীয় রুটে চলাচলকারী জাহাজের জন্য অপর একটি জেটি বরাদ্দ রাখা হয়। সাতটি জেটির মধ্যে তিনটি জেটি প্রায়োরিটি বার্থিংয়ে চলে যাওয়ায় বাকি ৪টি জেটিতে ৪৫টি জাহাজ বার্থিং কার্যক্রম সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বন্দরে আসা গিয়ারলেস ভ্যাসেলগুলোকে বার্থিং পাওয়ার জন্য বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে একেকটি গিয়ারলেস ভ্যাসেলকে তিন–চার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। একটি জাহাজ একদিন অলস ভাসলে ১৫ থেকে ২০ হাজার ডলার ফিঙড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি বাবদ খরচ হয়, যার যোগান দিতে হয় আমদানিকারককে।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী একাধিক আমদানিকারক এই সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, গিয়ারলেস ভ্যাসেল নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। প্রায়োরিটি বার্থিংয়ের কারণে এসব জাহাজকে অহেতুক অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বন্দরে জাহাজজট বা কন্টেনারজট না থাকলেও শুধুমাত্র জেটি সংকটের কারণে গিয়ারলেস ভ্যাসেলগুলোকে তিন–চার দিন পর্যন্ত অলস সময় কাটাতে হয়। এটি আমদানিকারকদের জন্য একটি বড় সমস্যা।

চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, এটি সাধারণ একটি ব্যাপার। বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে প্রায়োরিটি বার্থিংয়ের সিস্টেম রয়েছে। আমাদের বন্দরেও আছে। প্রায়োরিটি বার্থিংয়ের জাহাজ যখন থাকে না তখন সাধারণ জাহাজগুলোকে এসব জেটিতে বার্থিং দেয়া হয়। তবে প্রায়োরিটি জাহাজ থাকলে তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়। পানগাঁওকে আমরা বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি। এটি আমাদের জন্য জরুরি। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজও প্রায়োরিটি বার্থিং পাওয়ার দাবিদার। আর ইউরোপের রুটটিকে আমরা বাড়তি নজর দিচ্ছি। এটি আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য জরুরি। তাই ইউরোপের জাহাজ এলে সেগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে বার্থিং করার ব্যবস্থা করি। এতে করে সাধারণ গিয়ারলেস জাহাজগুলোকে দুয়েকদিন বাড়তি সময় অপেক্ষা করতে হয়। আমরা বার্থিং সুবিধা বাড়িয়ে এই সংকটের সুরাহা করতে চাচ্ছি। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে অপারেশন শুরু হলে এই সংকট থাকবে না।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031