চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের দুই বছরের ব্যবধানে ইউজার ফি বাবদ আয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে । ২০২০–২১ অর্থবছরে ইউজার ফি বাবদ হাসপাতালের আয় ছিল ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তবে সদ্য সমাপ্ত ২০২২–২৩ অর্থবছরে এই খাতে আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি। হিসেবে দুই বছরের ব্যবধানে ইউজার ফি বাবদ আয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আর মাঝখানে ২০২১–২২ অর্থবছরে এ খাতে হাসপাতালের আয় ছিল সাড়ে ১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে এক বছরে আয় বেড়েছে চার কোটি টাকা। হাসপাতালের বিগত তিন বছরের আয় পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরীক্ষা–নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে বলেই হাসপাতালে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে বলে মনে করেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। আর সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালের ইউজার ফি বাবদ আয়ও বাড়ছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা ধরে রাখতে চান বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়– আন্তঃ বিভাগ ও বহিঃ বিভাগের টিকিট বিক্রি, প্যাথলজি ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজিতে পরীক্ষা–নিরীক্ষা, হৃদরোগ ও ক্যান্সার বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রদত্ত সেবার বিপরীতে রোগীদের কাছ থেকে এই ইউজার ফি আদায় করা হয়ে থাকে। যদিও ইউজার ফি’র সিংহ ভাগই আসে প্যাথলজি ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষা বাবদ। এর মাঝে প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয়ে থাকে। সিবিসি, আরবিএস, ক্রিয়েটিনিন, বিলিরুবিন, সিআরপি, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এসজিপিটি, ইলেকট্রোলাইট, কোলেস্ট্রল, ইউরিন, ডোপ টেস্টসহ প্যাথলজি সংক্রান্ত ৩৮ ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুবিধা রয়েছে এখানে। আর রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগে এঙ–রে, আলট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, মেমোগ্রাম, ওপিজিসহ বিভিন্ন টেস্ট করা হয়ে থাকে। অবশ্য, প্রায় দেড় বছর ধরে বিভাগের একমাত্র এমআরআই মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে এমআরআই মেশিনের সেবাও বন্ধ রয়েছে। এর বাইরে হৃদরোগ বিভাগে ইসিজি, এনজিওগ্রাম, ইকো কার্ডিওগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি সেবা চালু রয়েছে ক্যান্সার বিভাগে। মূলত এসব সেবার বিপরীতে রোগীদের কাছ থেকে ইউজার ফি আদায় করা হয় হাসপাতালে।

আর এসব পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও সেবায় খরচও বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক কম। প্রায় অর্ধেক বলা চলে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়– হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে মাত্র ২০০ টাকায় রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু বাইরে এ পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকার কম নয়। একই ভাবে প্রায় সব ধরণের পরীক্ষা–নিরীক্ষার ফি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের চেয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কয়েকগুণ বেশি।

আর হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে এঙ–রে বাবদ ফি নেয়া হয় ২০০ টাকা। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ফি চারশ থেকে ৬শ টাকা। আলট্রাসনোগ্রাম বাবদ রেডিওলজি বিভাগে ১১০ থেকে ২২০ টাকা খরচ পড়ে। বেসরকারি পর্যায়ে এ ফি ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। সিটি স্ক্যান করাতে রেডিওলজি বিভাগে খরচ হয় ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। বাইরে এ খরচ ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এমআরআই পরীক্ষায় রেডিওলজিতে খরচ পড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। কিন্তু একই পরীক্ষায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খরচ পড়ে ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।

তুলনামূলক অনেক কম খরচে পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও সেবা গ্রহণের সুবিধা থাকায় প্যাথলজি, রেডিওলজিসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীর ভিড় দিনদিন বাড়ছে বলে মনে করেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। আর সেবাগ্রহীতার চাপ বৃদ্ধির ফলে ইউজার ফি বাবদ হাসপাতালের আয়ও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে।

দৈনিক কম হলেও ৬ শতাধিক রোগীর বিভিন্ন টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া। তিনি জানান, বছর খানেক আগেও দৈনিক সর্বোচ্চ আড়াইশ থেকে তিনশ টেস্ট হতো। কিন্তু এখন ৬ শতাধিক টেস্ট হচ্ছে দিনে। তাছাড়া নতুন করে ডোপ টেস্ট চালু হয়েছে। দিনে শতাধিক ডোপ টেস্ট হয় এখানে। সবমিলিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষার সংখ্যা আগের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে।

সেবা গ্রহীতাদের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে সম্প্রতি সংস্কার কাজও করে হাসপাতাল প্রশাসন। সংস্কারের অংশ হিসেবে বাড়ানো হয়েছে নমুনা (স্যাম্পল) সংগ্রহে কাউন্টারের সংখ্যা। পাশাপাশি সেবা প্রার্থীদের জন্য করা হয়েছে বসার ব্যবস্থাও। এতে করে সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে। এতদিন নমুনা সংগ্রহে কম সংখ্যক কাউন্টারের কারণে সেবা প্রার্থীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হতো। বসার ব্যবস্থাও ছিল অপর্যাপ্ত। সবমিলিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হত সেবা প্রার্থীদের। তবে সংস্কারের মাধ্যমে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগকে বর্তমানে নতুন রূপ দেয়া হয়েছে।

প্যাথলজিতে নমুনা সংগ্রহের কাউন্টার (বুথ) বাড়িয়ে তিনটি থেকে সাতটি করা হয়েছে জানিয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব পালিত বলছেন, এখন সেবা প্রার্থীরা অনেকটা ঝামেলাহীন ভাবে সেবা পাচ্ছেন। পাশাপাশি স্টাফরাও নির্বিঘ্নে সেবা দিতে পারছেন। সেবার পরিবেশটাও অনেক উন্নত হয়েছে। যার কারণে এখানে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। সবমিলিয়ে হাসপাতালের ইউজার ফি বাবদ আয়ও স্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে।

প্যাথলজি ও রেডিওলজিসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সেবাগ্রহীতাদের চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি ইতিবাচক বলেই মনে করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তিনি বলেন, পরীক্ষা–নিরীক্ষার ক্ষেত্রে হাসপাতালের প্যাথলজি ও রেডিওলজি বিভাগ যে কোনো ভাবে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেই এখানে পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য রোগীদের ভিড় বাড়ছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক। প্যাথলজির কথাই যদি বলি– এক বছর আগে প্যাথলজির জন্য যে পরিমাণ রি–এজেন্ট কিনতে হতো, বর্তমানে এর দ্বিগুণ কিনতে হচ্ছে। একই ভাবে রেডিওলজির এঙ–রে’র সংখ্যাও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আগে যে সংখ্যক ফিল্ম দিয়ে প্রায় বছর পার হয়েছে, এখন ওই সংখ্যক ফিল্ম মাত্র তিন মাসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি টাকার এঙ–রে ফিল্ম কিনতে হয় বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক। তবে এমআরআই, মেমোগ্রাম, ব্র্যাকিথেরাপিসহ আরো বেশ কয়টি মেশিন অচল থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে এসব মেশিনের সেবা বন্ধ ছিল। এসব মেশিনের সেবা চালু থাকলে আয় আরো বাড়তো বলে দাবি করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031