প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রামপাল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেক ভুল ও অতিরঞ্জন আছে। প্রধানমন্ত্রী কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণার শিকার বলেও মন্তব্য করেন তারা।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ ও সমালোচনার জবাব দিতে শনিবার বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। এর সপক্ষে তিনি বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।

বিবৃতিতে জাতীয় কমিটির নেতারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রামপাল বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন জানবার পর থেকে মানুষের মনে একটু আশার সঞ্চার হয়েছিল যে হয়তো প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য এবং দেশজোড়া জনমত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন এবং রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার পথ গ্রহণ করবেন। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত, সে কারণে তাঁর বক্তব্যে অনেক ভুল তথ্য, অতিরঞ্জন আছে। এমনকি আমরা গত ২৮ জুলাই ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি’-তে যেসব প্রচারণা খণ্ডন করেছি, প্রধানমন্ত্রী আবারও সেগুলোই উচ্চারণ করেছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের উদাহরণ, বড়পুকুরিয়ার ক্ষতি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।’

‘এতোসব আন্দোলনের খরচ কে যোগান দেয়?’ প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগের জবাব জাতীয় কমিটির নেতারা বলেন, ‘অবগতির জন্য জানাচ্ছি, এই আন্দোলন জনগণের গায়ে গতরে গড়ে তোলা আন্দোলন। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন ভাষা আন্দোলনে মানুষ পয়সা দিয়ে আনতে হয়নি, ৬০ দশকের আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধে মানুষ জীবন বাজি রেখে গেছে। পয়সা দিয়ে দালাল আসে যেমন রামপালের প্রকল্পের পক্ষে প্রচারকরা আছে। এটা খুবই হতাশাজনক যে, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেছেন। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে তরুণেরাই প্রধান শক্তি। তারা আজকের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে জমায়েত হয়েছে। তাঁদের প্রেরণা, প্রাণের টান বোঝার ক্ষমতা থাকলে সুন্দরবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার উদ্যোগ দেখা যেতো না।’

বিবৃতিতে রামপালবিরোধী নেতারা বলেন, ‘একদিকে বিএনপি নেত্রী সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সুন্দরবন আন্দোলন বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন অন্যদিকে তার বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনকে কালি মাখানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা পরিষ্কার করে বলি, সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণের ওপর ভর করে এবং সামাজিক দায়বোধ থেকে স্বাধীন ও স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন হিসেবে গত কয়েক বছরে বিকশিত হয়েছে। আমরা এখনো আশা করি, এই আন্দোলনকে কলঙ্কিত না করে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি দায়বোধ থেকে জনগণের স্বার্থ বুঝতে চেষ্টা করে মানুষ ও প্রকৃতি বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল করবেন।’

বিবৃতিতে জাতীয় কমিটির নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় কমিটির বিস্তারিত বক্তব্য আগামী সোমবার বেলা ১১টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031