আজ ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্রের জন্য আত্মাহূতি দেওয়া । ১৯৮৭ সালের এই দিনে তৎকালীন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ঢাকার রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নূর হোসেন।

সেদিন বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ ও ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে মিছিলের অগ্রভাগেই ছিলেন শহীদ নূর হোসেন। মিছিলটি গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে পৌঁছলেই নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে নূর হোসেনের এই আত্মত্যাগ এখন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। তার এই রক্তদানের মধ্য দিয়ে তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হয়। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। সে সময় সংবাদপত্রে নূর হোসেনের স্লোগান লেখা ছবি ও তার মৃত্যুর খবর সারা দেশে আলোড়ন তৈরি করেছিল। হাজার হাজার তরুণ এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে ঝাঁপিয়ে পরে গণতন্ত্রের আন্দোলনে। বরাবরের মতো এ বছরও দিনটি যথাযথভাবে পালনের উদ্যোগ নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এদিন সকালে ‘শহীদ নূর হোসেন চত্বরে’ (জিরো পয়েন্ট) শ্রদ্ধা নিবেদনসহ তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং স্মরণসভা করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন।

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়। উত্থান ঘটে স্বৈরশাসনের। অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনসহ আরও অনেকে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছেন। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময় পাওয়া এই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে’।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ১০ নভেম্বর একটি অবিস্মরণীয় দিন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নূর হোসেন তার বুকে ও পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫-দলীয় ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দিয়েছিল। নূর হোসেন আমার গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছিল, মিছিলটি যখন জিরো পয়েন্টে পৌঁছে তখন স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিল লক্ষ্য করে প্রথমে বোমা মারে, এরপরই গুলি করে, সে গুলিতে নূর হোসেন ও বাবুল নিহত হয়। এ ছাড়াও যুবলীগের আরেক নেতা নূরল হুদা ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো শহীদ হয়। তাদের এই মহান আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলনকে বেগবান করে। সর্বস্তরের মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে এবং স্বৈরাচারী সরকারের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়।’

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী নূর হোসেনসহ সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031