গতকাল ফল প্রকাশ করা হয়েছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সরকারি–বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ডিজিটাল লটারি শেষে। চট্টগ্রামের সরকারি দশটিসহ খ্যাতনামা অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলও এই লটারির আওতায় শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। আজ (বুধবার) থেকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিটি স্কুলের খালি আসনের বিপরীতে দুইটি অপেক্ষমাণ তালিকার ফলও গতকাল অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। লটারিতে সিট পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সস্টিটিউটে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় সারাদেশের শিক্ষার্থী ভর্তির ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠিত হয়। এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন চট্টগ্রামের ১০টিসহ সারাদেশের ৬৫৮টি সরকারি এবং ৩ হাজার ১৮৮টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য এই লটারি অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামের ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে ২ হাজার ৪২৪টি আসন রয়েছে।

স্মরণ করা যেতে পারে, শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ২৪ অক্টোবর। প্রথমে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করার কথা থাকলেও পরে সময় বাড়িয়ে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের আজ থেকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ভর্তি করানোর নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক (মাধ্যমিক) ও ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মাউশি সূত্র জানিয়েছে, লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফলাফল শিট (অপেক্ষমাণ তালিকাসহ) এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলাফল শিটের প্রথম তালিকা অনুযায়ী আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে। এরপর আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি শুরু করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রথম তালিকা থেকে ভর্তির পরবর্তী চার কর্মদিবস প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করা হবে। তারপরের তিনদিনে দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ক্রমিক নম্বর অনুসারে ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে।

শিক্ষার্থী যাচাই যেভাবে : কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লটারির আওতাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের https://gsa.teletalk.com.bd লিংকে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানে কারা আবেদন করেছিল, সেই তালিকা পাওয়া যাবে। ডিজিটাল লটারিতে তার প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত প্রথম তালিকা এবং প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকার শিক্ষার্থীদের আবেদন সংক্রান্ত তথ্য এ লিংক থেকে যাচাই করতে পারবেন। লিংকে তথ্যাদি টাইপ করে সাবমিট করলে আবেদনকারী কতবার আবেদন করেছে, তাও জানা যাবে। এক্ষেত্রে কোনো আবেদনকারী তথ্য পরিবর্তন করে একাধিকবার আবেদন করে থাকলে ডিজিটাল লটারিতে তার ভর্তির নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে নির্বাচিতদের তালিকা প্রদর্শন করবেন।

ভর্তির জন্য কাগজপত্র : নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র যাচাইকালীন শিক্ষার্থীর জন্মসনদের মূলকপি, জন্মসনদের অনলাইন কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাই করতে হবে)। বাবা–মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মূলকপি ভালো করে দেখতে হবে।

মিথ্যে তথ্য দিলে বাদ পড়বেন নির্বাচিতরা : ভর্তির সময়ে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকলে (যাচাই সাপেক্ষে) তাকে ভর্তি করা যাবে না।

কোটার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম প্রযোজ্য : শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ জারিকৃত ভর্তি নীতিমালায় যেসব কোটা সংরক্ষিত রয়েছে, ভর্তির সময়ে ওই কোটাগুলোতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কোটা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে। শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া অন্যান্য কোটায় শূন্য আসন পূরণ না হলে সাধারণ নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অপেক্ষমাণ তালিকার ক্রমানুসারে শূন্য আসন পূরণ করতে হবে। কোনোভাবেই আসন শূন্য রাখা যাবে না।

মাউশির নির্দেশনা অনুসরণ না করে বিধিবহির্ভূতভাবে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে এবং পরে তা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধান দায়ী থাকবেন বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। শিক্ষার্থীরা কে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে তা অনলাইনে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সুযোগে সমতা তৈরি হয়েছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা যারা নামিদামি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতো না তারা ভর্তি হতে পারছে। কাজেই একটা সুযোগের সমতা তৈরি হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য আসনের বিপরীতে দ্বৈচয়নের ভিত্তিতে আমরা শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠদান পেয়ে দক্ষতা, যোগ্যতা ও জ্ঞান অর্জন করবে। এ দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। আমরা তথাকথিত স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি, তারা রেডিমেড শিক্ষার্থী নেবে আর ভালো ফলাফল করবে তাহলে শিক্ষকদের কাজটা কী? তাহলে কেন তাদের আমরা অবকাঠামো দেবো? কেন এমপিও দেবো?

লটারির ফলাফল ই–মেইলে স্কুলপ্রধানদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে মাউশি। আর শিক্ষার্থীরা কে, কোন স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, সেটা আবেদনের সময় তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে মনোনীত সবাই এসএমএস পাবে বলেও মাউশি সূত্র জানিয়েছে।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930