টেম্পু শ্রমিক ও স্থানীয়দের কাছে এক মূর্তিমান আতংকের নাম জানে আলম চট্টগ্রামের নতুন ব্রীজ এলাকায় । শ্রমিকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে চাঁদা নেওয়া,জায়গা দখল, মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িত এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে তাদের উপর।

ব্রীজ এলাকা থেকে বিভিন্ন নামে পাওয়া বিপুল পরিমাণ চাঁদা দিয়ে সব ম্যানেজ করে বীর দর্পে চলে তাঁর রাজত্ব। এমন নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাধারণ শ্রমিকরা।
এলাকায় সরেজমিনে নতুন ব্রীজ এলাকা গিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) এলাকার বশিরুজ্জামান চত্বর থেকে টাইগার পাস পর্যন্ত ১৭ নম্বর সড়কে যাত্রীদের চলাচলের অন্যতম বাহন অটো টেম্পু। বৈধ-অবৈধ মিলে ৪ শতাধিক গাড়ি চলাচল করে এ সড়কে। এ অটো টেম্পো স্টেশনকে ঘিরে উত্তাণ হয় কথিত শ্রমিক নেতা জানে আলমের।

চন্দনাইশ উপজেলার পশ্চিম কেশুয়া গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের মৃত গুরা মিয়ার ছেলে এ জানে আলম। সে টেম্পো সহকারী থেকে এক পর্যায়ে বিভিন্ন কৌশলে দীর্ঘ ২ দশকেরও বেশি সময় থরে বহাল তবিয়তে রয়েছে চট্টগ্রাম অটো-টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্তা না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোড পারমিটের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুন গাড়ি এই রোডে চলার সুযোগ করে দেয়। গাড়ি চলাচলের লাইন চার্জ দৈনিক ২০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও প্রতিটি গাড়ি ২৫০টাকা থেকে ৩০০টাকা ও প্রতি মাসে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকাসহ অনৈতিকভাবে চাঁদা আদায়ের ফলে অল্পদিনে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যায় টেম্পো সহকারী থেকে উঠে আসা এ শ্রমিক নেতা। সমিতিও চালায় তার একক নিয়ন্ত্রনে। শ্রমিক ও এলাকার কিশোরদের নিয়ে গড়ে তুলেছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। কেউ এর বিপক্ষে গেলে তার উপর চলে নির্যাতন।
ইউনিয়নের সদস্য সিএনজি চালক মো. মাঈনুদ্দিন জানান, আমি ১০ বছর যাবৎ এ লাইনে কাজ করছি। লাইন চার্জ বাবদ গাড়ি প্রতি ২০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও ৩০০টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে। প্রতিমাসে দিতে হয় গাড়ি প্রতি ২ হাজার টাকা। লাইনে ১৪০টির পারমিট থাকলেও ৩০০ খেকে ৪০০টি গাড়ি চলছে। লাইনে নতুন গাড়ি ঢৃকালে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দিতে হয়। জানতে পেরেছি সে অনৈতিকভাবে মাসে অর্ধকোটি টাকা মত চাঁদা আদায় করে। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করাই আমাকে মারধর করেছে। আমাকে লাইন থেকে বের করে দিয়েছে। আমার কার্ড নিয়ে পেলেছে। আমার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দিয়েছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে।
আরেক সিএনজি চালক নিজাম উদ্দিন জানান, লাইনে অনৈতিকভাবে চাঁদা নেওয়া, অবৈধ গাড়ি ঢুকানোসহ বেশ কয়েকটি অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছি বলে আমাকে লাইন থেকে বের করে দিয়েছে। তার বাহিনী অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে। শুধু আমি না আমার মত প্রতিবাদ করায় কয়েক’শ শ্রমিক লাইন থেকে বের করে দিয়েছে। তারা এখন বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা তাঁর জিম্মি দশা হতে মুক্তি পেতে সরকারের সহযোগিতা চাই।
চট্টগ্রাম অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ নুরুল বশর জানান, কথিত শ্রমিক নেতা জানে আলম আসলে শ্রমিক না। কথিপয় দুস্কৃতিকারীদের সঙ্গে নিয়ে এসব অপকর্ম করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আগে দেখতাম শ্রমিকদের থেকে চাঁদা নেয় এখন দেখছি রাস্তায় হর্কারদের থেকেও চাঁদা নিচ্ছে। অন্যায়ভাবে মানুষের জায়গা দখল করছে। যে প্রতিবাদ করে তাকে নির্যাতন করে এবং মিথ্যা মামলা দেয়। এখানে ইউনিয়নের প্রকৃত শ্রমিকরা এ লাইনে গাড়ি চালাতে পারে না। তারা এখন ১৭ নং রোডে গাড়ি চালাতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। জানে আলম সমিতির প্যাডে নিউ মার্কেটের দোস্ত বিল্ডিং এ সংগঠনের অফিস দেখালেও বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। সে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মানে না, লেভার কোর্টের নিয়ম না। সে বিভিন্ন কৌশলে বছরের পর বছর ইউনিয়নের পদ ধরে আছে।
বাকলিয়া শহীদ এনএমএমজে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (নোমান কলেজ) ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আজমীর হোসেন জানান, এলাকাটা বাস্তুহারামুথী। এলাকার বেশিরভাগ ছেলে এখানে শ্রমিকের কাজ করে। এখানে শ্রমিকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে চাঁদা আদায় ও নির্যাতন করত জানে আলাম। যার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির প্রস্তুতি সহ ১২ থেকে ১৫টি মামলার রয়েছে।

বেশ কয়েকবার জেলেও গেছে। জেল থেকে বেড়িয়ে আবার অপকর্ম করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিতে দেরি করে না জানে আলম
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের অর্থ সম্পাদক ও ৩৫ নং বক্সিরহাট ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মান্না বিশ্বাস জানান,জানে আলম নিজেকে তথা কথিত শ্রমিক নেতা হিসাবে দাবী করে আসলেও সে তো শ্রমিক না। শ্রমিকের সাথে জড়িত না। আমরা জানতে পারছি আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা তুলে। সে আওয়ামীলীগের কেউ না। সে শ্রমিকদের নির্যাতন করছে। যে তার বিরুদ্ধে কথা বলে তাকে মামলা দিচ্ছে। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সিএমপি কমিশনার বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি।
অল্পদিনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বৈভবের মালিক বনে যাওয়া এ শ্রমিক নেতার দৃস্টি পড়ে অন্যের জায়গার উপর। অন্যের জায়গা দখল, ব্রীজ এলাকার রাস্তায় হর্কারদের থেকে চাঁদা নেওয়া,মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরধ কর্মকান্ড চালায় নির্বিঘ্নে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে দল বল নিয়ে জানে আলম বাহিনী বাকলিয়া থানাধীন রাজাখালীস্থ মীর ফিলিং স্টেশনের বিপরীতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম হাজী আবুল হাসেমের ছেলে নজরুল ইসলাম ও ফখরুল ইসলমের পৈত্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টিম্বার ডিপোতে হামলা চালিয়ে ডিপোর জায়গার একটি ভংশ দখলে নেয় এসময় নগদ টাকা আসবাবপত্র নিয়ে যায় অফিস ভাংচার করে ঘটনায় ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বাকলিয়া থানায় মামলা করলে কয়েকজন গ্রেফতার হলেও সে ধরাছৌয়ার বাইরে থাকে। পরে আদালত থেকে সবাই জামিন নিয়ে উল্টো আবুল কাসেমের দুই ছেলে নজরুল ইসলাম ও ফখরুল ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ২০ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি মামলা দেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ টিম্বার ডিপোতে দথল, হামলা ওভাংচরের ঘটনায় পুলিশ পরিদর্শনে এলে সঠিক সাক্ষ্য দেওয়ায় গত ২৫ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যার পর জানে আলমের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের কিশোর গ্যাং শ্রমিক বশরকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসের পাশে নিয়ে লোহার রড, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে মারাত্মক যখম করে। এ রকম অভিযোগ অহরহ রয়েছে জানে আলমের বিরুদ্ধে
সব বিষয়ে অস্বীকার করে জানে আলম তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবী করেন একটি পক্ষ সমিতিকে দখল করার জন্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
এ বিষয়ে বাকলিয়া থানা ভারপ্রা্প্ত কর্মকর্তা মো. আফতাব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জানে আলমের বিরুদ্ধে কেউ সুনির্দিস্ট অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জোনের দায়িত্ব প্রাপ্ত সিএমপি উপ- পুলিশ কমিশনার ( দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানালেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সন্ত্রাস ও চাদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। ইতিমধ্যে আমরা বহুলোককে গ্রেফতর করেছি। পুলিশ আইনের মধ্যে কাজ করে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
প্রশাসন ও পুলিশের তৎপরাতয় বেশিরভাগ সড়কে ফিরেছে শৃঙ্খলা। কিন্তু এই একজন জানে আলমের কাছে পরিবহন শ্রমিকরা জিম্মি। তাই এই জিম্মিদশা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের সংশ্লিস্ট উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031