গাড়িতে আগুন দিয়ে সরকার ফেলা যায় না আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন । বিএনপির আন্দোলনে প্রতিরোধ গড়ার পাশাপাশি নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি । গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়? অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি–জামায়াত নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয় আর কতগুলো লোক নিয়ে এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে এটা তাদের মনে রাখা উচিত। তারা মনে করেছে দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ না। অত ভাত দুধ দিয়ে খায় না। খবর বিডিনিউজের।

প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা সাধারণত সিলেট থেকেই প্রচার শুরু করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সাড়ে ১১টায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন তিনি। ছোট বোন শেখ রেহানাও এ সফরে তার সঙ্গে ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে দুই বোন প্রথমে যান হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারে। পরে তারা যান হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজারে। সেখান থেকে বের হয়ে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, কোনো দল চাইলে নির্বাচনে না আসতে পারে; কিন্তু আগুন দিয়ে মানুষ মারার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।

সেখান থেকে সার্কিট হাউজে গিয়ে দুপুরের খাবার খান শেখ হাসিনা। বিকাল ৩টায় তিনি যোগ দেন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায়। সকাল থেকেই এই মাঠে জড়ো হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হাতে লাল–সবুজ পতাকার সঙ্গে রঙিন পোশাক উৎসবের আমেজ তৈরি করে গোটা এলাকায়। সভা মঞ্চে এসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। জনসভায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ১৯টি সংসদীয় আসন থেকেই আসেন নেতাকর্মীরা। সবগুলো আসনে দলের প্রার্থীরাও ছিলেন সভামঞ্চে।

নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, এই নৌকা নুহ নবীর নৌকা, এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, আবার এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ–সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে জনগণের উন্নতি হচ্ছে। আজকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলা এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি।

২০০১ সালে যে নির্বাচনে জিতে বিএনপি–জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে, সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া; ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেই কারণে বাহবা দিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসাল। রেজাল্ট কী? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন। আমি বলেছিলোম খালেদা জিয়া গ্যাস দিতে পারবে না, গ্যাস পাবেই না। আসলে পায়নি, দিতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা। যে কূপ খনন করে খালেদা জিয়ার আমলে গ্যাস পায়নি, সেই কূপ খনন করে আওয়ামী লীগের আমলে আমরা শুধু গ্যাস না, তেলও পেয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয়, জন বুঝেই ধন দেয়। আল্লাহ জানে ওদের কাছে দিলে সব নয়ছয় করবে। আর আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে। এরপর জনতার উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন, বলেন, আমি ঠিক বলছি? সবাই তখন সমস্বরে চিৎকার করে সমর্থন জানান।

জনসভায় আওয়ামী লীগ আমলে গত ১৫ বছরে সিলেটে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে ভবিষ্যতের চিন্তাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। সিলেটে মেট্রোরেল চালু করা যায় কি না সেটা তা সমীক্ষা করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাজেই জনগণের সেবা করা। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে করব কথা দিয়েছিলাম; বাস্তবায়ন করেছি, করে দিয়েছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন; মেধাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা, মেধা দক্ষতা ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি, উন্নত, উদার, অগ্রসমান সমাজ। আমরা অসম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ে তুলব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। স্মার্ট সরকার, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি; সেটা করেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলব, বলেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

বিএনপির আন্দোলনেরও কঠোর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আজকে সমস্ত জায়গায় বোমাবাজি, খুন আর অগ্নিসন্ত্রাস এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা। এর বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা যেমন উন্নয়নের কাজ করেছি, ওদের কাজ হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো। মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকলে এইভাবে আগুন দিয়ে মা শিশু, মা সন্তানকে বাঁচানোর জন্য শিশুকে বুকের মধ্যে ধরে রেখেছে। সেই মা পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে বাচ্চাসহ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031