আপিল বিভাগ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মন্ত্রী হিসেবে নেয়া শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে জানিয়েছে। আপিল বিভাগে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর বিচারের রায়ের আগে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় এই দুই মন্ত্রীকে দেয়া অর্থদণ্ডের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আদালত অবমাননা মামলায় গত ২৭ মার্চ সংক্ষিপ্ত রায়ে দুই মন্ত্রীকে অর্থদণ্ড দিয়ে তা সাত দিনের মধ্যে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ও লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশে দিতে বলেছিল আপিল বিভাগ। পরিশোধ না করা হলে এই দুই মন্ত্রীকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত।

পাঁচ মাসের বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমারসহ পাঁচ বিচারপতিই দুই মন্ত্রীর শপথ ভঙ্গের বিষয়ে একমত হয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য চার বিচারক হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

আর দুই মন্ত্রীর শপথ ভঙ্গের বিষয়ে তিন বিচারপতি ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। এরা হলেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মো. নিজামুল হক।

আইনজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের এই রায় প্রকাশের পর দুই মন্ত্রীর আর এক মুহূর্ত দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে শপথ ভঙ্গ করলে এর সাজা কী সেটা বলা নেই সংবিধানে। কিন্তু নৈতিক কারণে তাদের পদে থাকা উচিত নয়।

তবে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দাবি করেছেন, রায়ে তাদের শপথ ভঙ্গের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘রায়ের কপি আমার হাতে আছে। এতে আমি শপথ ভঙ্গ করেছি এটা তো পাইনি। একজন  বিচারক কেবল বলেছেন আমি শপথের বরখেলাপ করেছেন।’

যোগাযোগ করলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনও কিছু জানি না। রায়টা আগে দেখি, পড়ি, বুঝি, এরপর বিবৃতি দেবো।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে যা বলা হয়েছে

দুই মন্ত্রীর আদালত অবমাননা মামলার রায়ের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এই দুই জন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। রায়ে বলা হয়, ‘আমাদের সন্দেহ নেই যে, বিবাদীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্ক্তব্য রেখেছেন এবং তারা তাদের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা এই প্রতিষ্ঠানকে খাটো করেছেন।’

এর আগে গত ২৭ মার্চ আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘দুই মন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ করতে আমরা অপারগ। তারা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত, তারা সংবিধান রক্ষায় শপথবদ্ধ। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য আপাতদৃষ্টিতে উদ্দেশ্যমূলক, যেখানে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় ও সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা খাটো করা হয়েছে। ওই মন্তব্য বিচার প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ। নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তাদের আবেদন আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। গুরুতর আদালত অবমাননার দায়ে তারা দোষী।’ তবে শুরুতেই দুই মন্ত্রী নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন করেন বলে সাজা দেওয়ায় নমনীয়তা দেখিয়েছে আদালত।

জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিল রায়ের তিন দিন আগে গত ৫ মার্চ ঢাকায় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির এক গোলটেবিল বৈঠক আলোচনায় কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরূপ সমালোচনা করেছিলেন। এরপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তাদের প্রতি আদালত অবমাননার রুল জারি করে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031