প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈদেশিক আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে একই গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের আরও নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার (রপ্তানির জন্য) অন্বেষণে মনোযোগ দিতে হবে।

আমরা বর্তমানে রপ্তানির জন্য কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর করি। রপ্তানির জন্য একটি বা দুটি পণ্যের ওপর নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ অনেক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। গতকাল সকালে রাজধানীর উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৪–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে তিনি হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখায় এ খাতে বিশেষ নজর দিতে হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছি সেখানে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াব ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম, কিন্তু আমাদের নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। আর একটা লক্ষ্য স্থির থাকলে যে কোনো অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই।

সারা দেশে তার সরকারের ১শ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ হবে এবং কোন অঞ্চলে কোন পণ্য ভালো হয় সেখানে সেই শিল্প গড়ে উঠবে। সেবা খাতেও আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং ভালো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই খাতে রপ্তানি আয় ২০২২–২৩ অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিশাল সুযোগ সামনে রয়ে গেছে। আইটি খাতে ২০২২–২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ২৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারছি। যদিও বিশ্ব মন্দার অভিঘাতে ইউরোপ– আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও পণ্য চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে নতুন বাজার আমাদের খুঁজতে হবে, নতুন জায়গায় যেতে হবে।

তার সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সাথে পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে সরকার জাতীয় ট্যারিফ পলিসি ২০২৩ প্রণয়ন করছে। এটা আমাদের রপ্তানিতে আরো সুযোগ সুবিধা এনে দেবে।

তিনি বলেন, এখানে আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বিদেশি অতিথিরা আছেন। আমি একটা অনুরোধ করব, আমাদের আমদানি– রপ্তানিতে ভারসাম্য বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। আপনারা রপ্তানি করেন, রপ্তানি করার সময় যে অর্থ ব্যবহার হয় তার যে রিটার্নটা আসবে ঠিক চাহিদা মতো তা আসে না। সেদিকে সবাইকে একটু যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানাই।

এখন পলিটিক্যাল নয় ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির যুগ। সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদাটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর আমাদের প্রত্যেকটি কূটনৈতিক মিশনে আমরা এই মেসেজটাই দিয়েছি। ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসার আমরা কী রকম ঘটাব তার ওপরই আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলো কাজ করছে এবং করবে। পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদার উল্লেখ করে তিনি চামড়া সংরক্ষণ ও বহুমুখীকরণ করে চামড়া রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এবারের মেলায় তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হংকং ও ইরানের কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। বিদেশি কোম্পানির ১৬–১৮টি প্যাভিলিয়নসহ ৩৫১টি স্টল রয়েছে।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930