নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও গত এক মাস ধরে এই অবস্থা চলছে। ফিশিং ভ্যাসেলগুলো সাগরে দুয়েকদিনের বেশি থাকতে পারছে না। মাছ শিকারের ভর মৌসুমে সাগরে মাছ শিকারে ব্যাঘাত ঘটছে। থাকতে পারছে না গভীর সাগরে মাছ শিকার করা জাহাজও। উপকূলের কাছাকাছি থাকা ট্রলার বা বড় নৌকাগুলোরও একই অবস্থা। মাত্র দুদিন মাছ শিকার করে গতকাল ভোর থেকে সব জাহাজ, ট্রলার এবং নৌকা ঘাটে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞায় টানা ৬৫ দিন বন্ধ থাকার পর মাছ ধরার জন্য সাগরে গেলেও দুই–তিন দিনের বেশি থাকতে না পেরে নৌযানগুলোকে ফেরত আসতে হচ্ছে। দফায় দফায় সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় এক মাসের বেশি সময় ধরে মাছ শিকার কার্যত বন্ধ রয়েছে। তবে সাগরে প্রচুর মাছ আছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট নাবিকেরা বলেছেন, মাত্র দুদিন সাগরে থাকা জাহাজ এবং ট্রলারে ভালো পরিমাণ মাছ এসেছে। গতকাল নগরীর ফিশারিঘাটে বিপুল পরিমাণ ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের বিকিকিনি চলেছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হওয়ায় ১০/১৫ ফুট উঁচু ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রচণ্ড বাতাস। বাতাস এবং ঢেউয়ের তোড়ে সাগরে টিকে থাকা দায় হয়ে উঠেছে বলে সাগর–ফেরত একাধিক জাহাজের মাস্টার জানিয়েছেন। ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের প্রজনন সময়কাল নিরাপদ রাখতে সরকার ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ রেখেছে। ৬৫ দিন পর গত ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উৎসাহ–উদ্দীপনা নিয়ে জাল বুনন, ট্রলার মেরামত, জাহাজ ডকিংসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দেড় শতাধিক স্টিল বডির অত্যাধুনিক ফিশিং ভ্যাসেলসহ দুই শতাধিক ভ্যাসেল এবং শত শত ট্রলার ও বড় নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরার জন্য সাগরে যাত্রা করেন। তবে কোনো কোনোটি মোহনা পার হওয়ার পর ফিরে আসে, কোনোটি বহির্নোঙর থেকে। সাগর উত্তাল থাকার খবর পেয়ে কিছু ফিশিং ভ্যাসেল ওইদিন যাত্রাও করেনি। এতে করে ২৩ জুলাই থেকে সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠলেও একটি জাহাজও ওইদিন সাগরে যেতে পারেনি। পরে এক মাসের বেশি সময় ধরে দফায় দফায় আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় কয়েক দিনের বিরতিতে একাধিক লঘুচাপ সৃষ্টির ফলে সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে জাহাজ ও ট্রলারগুলো মাত্র ২/৩ দিন করে মাছ শিকার করে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। দুদিন আগে সাগরে যাওয়া শত শত নৌযান গতকাল ফিরে এসেছে। সাগরে টিকে থাকার মতো পরিস্থিতি না থাকায় সব জাহাজ ও ট্রলার নিরাপদ স্থানে চলে আসে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে সাগর উত্তাল করে তুলেছে। একইসাথে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় সাগরে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রয়েছে।
সাগর থেকে ফেরত আসা একটি জাহাজের মাস্টার টেলিফোনে জানান, বাতাসের তোড়ে ১০/১২ ফুট উচ্চতার একেকটি ঢেউ জাহাজে আছড়ে পড়ছে। বড় বড় ঢেউয়ের মুখে ফিশিং ভ্যাসেল বা ট্রলারের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা মাছ শিকার না করে ফিরে এসেছেন।
একাধিক ফিশিং ভ্যাসেলের মালিক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গতকাল আজাদীকে জানান, আমাদের সবগুলো জাহাজ আজ (গতকাল) ফিরে এসেছে। মাত্র দুদিন আগে জাহাজগুলো সাগরে গিয়েছিল। ১৫ দিন থাকার কথা ছিল। এক মাসের বেশি সময় ধরে এই অবস্থা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশ কয়েকবার আমাদের জাহাজগুলো সাগরে গেছে। কিন্তু প্রতিবারই দুই–তিন দিনের মাথায় ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছে। শুধু আমাদের নয়, সব ভ্যাসেল এবং ট্রলারের একই অবস্থা।
আগামী মাসের মাঝামাঝি পরিস্থিতি ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ট্রলার মালিক এস এম মামুন মিয়া বলেন, কোনো জাহাজ ও ট্রলার সাগরে টিকতে পারছে না। গভীর সাগরে মাছ শিকারের সক্ষমতা আছে এমন জাহাজগুলোও সাগরে টিকতে না পেরে চলে এসেছে। সব জাহাজ ও ট্রলার কর্ণফুলী নদীতে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছে। তিনি বলেন, আরো কয়েকদিন এমন পরিস্থিতি থাকবে।