রাহ্মণবাড়িয়ার এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান কিশোর হারুন মিয়া। ছয় বছর বয়সেই মাকে হারায় সে। দুই ভাই ঢাকায় ফেরি করে বাদাম বিক্রি করেন। সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন তারা। ছোট ভাই হারুনকে ঢাকায় এনে কাজ শিখতে দিয়েছিলেন অটোমোবাইলস ওয়ার্কশপে। স্বপ্ন ছিল ওয়ার্কশপের কাজ শিখে একদিন ভালো কারিগর হবে হারুন। সেই স্বপ্ন আঁতুড় ঘরেই মরতে বসেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ’তে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাকে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেপ্তার সাদ্দাম। হারুনের স্বজনরা জানান, ঢাকায় আসার পর থেকেই মোহাম্মদপুরের বছিলা রোডের মেঘনা অটোমোবাইলস অ্যান্ড ওয়ার্কশপ নামে গ্যারেজে কাজ শিখতো হারুন। গত ৩১শে আগস্ট বিকাল ৫টায় সেখানেই ঘটে ঘটনা। ঠিকমতো কাজ না করার কারণে মারধর করা হয় হারুনকে। জোর করে হারুনকে ধরে পায়ুপথে কমপ্রেসারের পাইপ ঢুকিয়ে বাতাস দেয়া হয়। ওয়ার্কশপের মালিক মিন্টুর সামনেই তার ভাই সাদ্দাম, কর্মচারী হাসান, রেজাউল এ ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম জানান, সাদ্দাম নিজেই কমপ্রেসারের পাইপ হারুনের পায়ুপথে ধরেছিল। এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে।
পায়ুপথে যখন বাতাস দেয়া হচ্ছিল তখন ‘মারবেন না ভাই, আমারে মারবেন না’, ‘ভাইগো আমারে বাঁচাও..’ বলে চিৎকার করছিল হারুন। আশপাশের অনেকেই এই চিৎকার শুনেছেন। হারুনকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছেন তারা। কিন্তু ওয়ার্কশপের মালিক, কর্মচারী সবাই এক হিংস্র উল্লাসে মেতে উঠেছিল ওই কিশোরের সঙ্গে। হারুন অচেতন হয়ে গেলে তবেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
হারুনের বড় ভাই রিপন মিয়া জানান, খবর পেয়ে তারা ছুটে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকরা জানান, কমপ্রেসারে বাতাস দেয়ার কারণে তার নাড়ি-ভুড়ি ছিঁড়ে গেছে। এ ঘটনায় মামলার করার পর নানাভাবে হুমকিধমকি দেয়া হচ্ছে হারুনের ভাই রিপনকে। রিপন বলেন, ‘আমি বাদাম বিক্রি করে খাই। গরিব মানুষ। ভাইকে কাজ শেখানোর জন্য গ্রাম থেকে এনেছিলাম। এখন আমার সব শেষ। ওরা আমার ভাইকে শেষ করে দিছে। ভাইকে বাঁচাতে পারব কি-না জানি না…’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিপন।
এ ঘটনায় বিনা ফিতে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন আইনজীবী সৈয়দ নাজমূল হুদা। তিনি জানান, গ্যারেজের মালিক মিন্টু ও কর্মচারী হাসানের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এই মামলার আরেক আসামি রেজাউলকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সৈয়দ নাজমূল হুদা বলেন, এর আগে খুলনায় শিশু রাকিব পরে নারায়ণগঞ্জে সাগর বর্মনকে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। শিশুর নিরাপত্তার জন্য এসব ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন। নতুবা এরকম অপরাধ বাড়তেই থাকবে বলে মনে করেন তিনি। শিশু হারুন ওরফে আরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার শ্রীঘর গ্রামের আবেদ আলীর পুত্র। সে ঢাকায় দুই ভাইয়ের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের কাটাসুরের রহিম বেপারীর ঘাট এলাকায় থাকতো।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
