চট্টগ্রামের স্বনামধন্য পর্যটন এলাকাখ্যাত পতেঙ্গায় বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজে চলছে অবাধে দেহব্যবসা ও অনৈতিক কার্যকলাপের মহোৎসব। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এসব হোটেল পরিণত হয়েছে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে।

পতেঙ্গা থানাধীন কাঠঘর থেকে শুরু করে সী বিচ সড়ক ও সমুদ্র সৈকত এলাকার, হোটেল র‌য়েল, সী কুইন, বিচ পয়েন্ট, টার্নেল পয়েন্ট, পতেঙ্গা টুডে, টার্নেল ভিউ, ডায়মন্ড, বেলমন্ড, বিএসএল, পিএসপি, সী বিচ ইন্টারন্যাশনাল, সাইমা, সী কিং, মিনি রিসোর্টসহ একাধিক হোটেলে প্রতিনিয়ত চলছে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

গোপন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব হোটেলে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত যেকোনো বয়সের যুগলরা সহজেই রুম ভাড়া পাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা বৈধ কাগজপত্র যাচাই না করেই ঘন্টাপ্রতি কিংবা রাতভিত্তিক রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।

হোটেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এ হোটেলগুলোতে দেহ ব্যবসার পাশাপাশি মাদক বিক্রি ও সেবনেরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, কিছু হোটেলে নিয়মিত “স্মার্ট” ও “সুন্দরী” তরুণীদের সরবরাহ করা হয় বিশেষ বিশেষ অতিথিদের জন্য। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে হোটেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী, ম্যানেজার এমনকি মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্ট লোকজন। এছাড়াও এসব বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এই বিষয়ে এ প্রতিবেদক হোটেল গুলোর একটিতে কাস্টমার সেজে প্রবেশ করলে দেখা যায়, ফ্রন্ট ডেস্কে থাকা কর্মীরা অতিথিদের পরিচয় যাচাই না করেই রুম বরাদ্দ দিচ্ছে। এমনকি প্রতিবেদকের সামনেই তিন জোড়া অবিবাহিত যুগলকে মাত্র ২-৩ ঘণ্টার জন্য মোটা অংকের মাধ্যমে রুম ভাড়া দেওয়া হয়।

প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন যুগল এভাবে এসব হোটেলগুলোতে আসছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব হোটেলের বেশিরভাগ এন্ট্রি ফরমেই মিথ্যা বা অসংগতিপূর্ণ তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে বিএসএল হোটেলের মালিক মো : হুমায়ুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং তিনি দাবি করেন, তারও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তাই এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকার প্রশ্নই আসে না।

এদিকে পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিক বলেন, “আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ ছাড়াও যদি অনৈতিক কার্যকলাপের তথ্য মেলে, সেক্ষেত্রেও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পর্যটন নগরী চট্টগ্রামের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এবং নিরাপদ ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে পতেঙ্গার অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

এদিকে এ এলাকা গার্মেন্টস এলাকা হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন স্হানীয় জনগণ। তারা এসব হোটেল গুলোর প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে দাবি করেন। অনেকেই এসব হোটেল গুলোর এ রমরমা ব্যবসার জন্য প্রশাসনকেই দায়ী করেন।

চট্টগ্রাম থেকে স ম জিয়াউর রহমান

Share Now
June 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30