এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে নির্বাচনের পূর্ববর্তী এই সময়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের রদবদল ও সম্ভাব্য পদত্যাগ ।
বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদেরকে ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে আখ্যা দিয়ে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। ফলে এই দুই উপদেষ্টা নির্বাচনের আগে পদ ছাড়বেন কি না, সেটি এখন রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
পদত্যাগের সম্ভাবনা ও প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত
আওয়ামী লীগের নামে এখন আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়: আমানউল্লাহ আমান
অন্তর্বর্তী সরকার ও এনসিপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুই ছাত্র উপদেষ্টা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে পারেন। একই সঙ্গে তারা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে দুই ছাত্র প্রতিনিধি যুক্ত হন। এর মধ্যে মাহফুজ আলম প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন, পরে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে এনসিপি গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা নাহিদ ইসলামও উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ফেব্রুয়ারিতে পদত্যাগ করে দলীয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন। সেই ধারাবাহিকতায় আসিফ ও মাহফুজের পদত্যাগও এখন সময়ের প্রশ্ন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
রাজনৈতিক চাপ ও অবস্থান
বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা ইতিমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কিছু উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও তারা প্রকাশ্যে কারও নাম বলেননি, তবুও রাজনৈতিক অঙ্গনে ধারণা করা হচ্ছে—ইঙ্গিতটি দুই ছাত্র উপদেষ্টার দিকেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের সূত্র বলছে, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই আসিফ ও মাহফুজকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি দায়িত্ব ছাড়বেন। আর মাহফুজ আলমও স্বীকার করেছেন, গত কয়েক মাস ধরে পদত্যাগের বিষয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
সম্ভাব্য আসন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
সূত্র বলছে, আসিফ মাহমুদ হয়তো কুমিল্লা-৩ নয়, বরং ঢাকা-১০ বা ঢাকার অন্য কোনো আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, যদিও এনসিপির সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে তিনি বিএনপি বা এনসিপি উভয় ব্যানারেই প্রার্থী হতে পারেন। তার ভাই মাহবুব আলম ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, মাহফুজ উপদেষ্টা পদ ছাড়লে রামগঞ্জ থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন।
ছাত্র উপদেষ্টাদের ভবিষ্যৎ ও এনসিপির অবস্থান
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “যে কেউ রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চাইলে আগে সরকারি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “যদি দুই ছাত্র উপদেষ্টা এনসিপিতে যোগ দিতে চান, আমরা তাদের স্বাগত জানাব।”
দলটির মিডিয়া সেল সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন জানান, “এখনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, তবে তারা যোগ দিতে চাইলে দলে স্বাগত জানানো হবে।”
অন্যদিকে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন মনে করেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা ও গণঅভ্যুত্থানের প্রতীক হিসেবে ছাত্র উপদেষ্টা থাকা জরুরি। তাদের পদত্যাগ সরকারের গ্রহণযোগ্যতায় প্রভাব ফেলতে পারে।”
নিরপেক্ষ নির্বাচনের বার্তা
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আমি পদত্যাগ করব। রাজনীতিতে সক্রিয় কেউ নির্বাচনী সরকারের দায়িত্বে থাকা উচিত নয়। এতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, পদত্যাগ করা উচিত “আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এজন্য সকল রাজনৈতিকভাবে যুক্ত ব্যক্তির তফসিলের আগে ।”
