একটি বাসও সময় মত ছাড়ছে না । তাই বাস কোম্পানির কাউন্টারগুলোতে প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে ভিড়। এত মানুষকে বসতে দেয়ার জায়গা কোথায়? তারা তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে কাউন্টারের বাইরে ফাঁকা জায়গা বা সড়কে। সেখানে বসার জন্য সামিয়ানা টাঙিয়ে দিয়েছে কোনো কোনো কোম্পানি। কোথাও বা যাত্রীরা মালামালের বস্তার সামনে অপেক্ষা করছে।

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ উবে গেছে এরই মধ্যে। কষ্ট করে কাটা বাসের আগাম টিকিট হয়ে গেছে গলার কাঁটা। এখন না ফেরা যাচ্ছে ঘরে, না চড়া যাচ্ছে বাসে। ফলে ক্রমাগত ক্লান্ত হয়ে টার্মিনালেই দুঃসহ, বিরক্তিকর অপেক্ষায় যাত্রীরা।

গত তিন দিন ধরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এই সড়ক ধরে চলা উত্তরের যাত্রীদের। চার লেনের কাজ চলার পাশাপাশি, ঈদে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, মহাসড়কের পাশে গরুর হাট, গরুবাহী ট্রাকের ঢাকামুখি যাত্রা, গাড়ি বিকল হওয়াসহ নানা কারণে বাঁধা এই যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতেই পারছে না পুলিশ।

কোনো বাস আসতে পারছে না নির্ধারিত সময়ের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরও। আর বাস আসলেই সেটা আবার নতুন যাত্রা শুরু করতে পারে না। চালকের বিশ্রাম, গাড়ির কিছু কাজ থাকে। ফলে নির্ধারিত সময়ের যাত্রা এক অসাধারণ স্বপ্ন হয়ে গেছে যাত্রীদের জন্য।

রংপুর থেকে আগমনী পরিবহনের যে বাস গতকাল বিকাল পাঁচটায় ছেড়েছে, সেটা সকাল ১০টাতেও পৌঁছেনি ঢাকায়। বাসটির চালক জানান, তখনও তিনি টাঙ্গাইলে আটকে ছিলেন। অথচ এই গাড়িটির সকাল সাতটায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।

আগমনী পরিবহনের ম্যানেজার মনির হোসেন জানান, ছয় ঘণ্টার রাস্তা ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টাও লাগছে। এই অবস্থায় যাত্রীদের যে কষ্ট হচ্ছে তাদেরকেও পোড়াচ্ছে। কিন্তু এখানে তাদের কিছুই করার নেই।

উত্তরের বিভিন্ন রুটের বাসগুলো গাবতলীর আগেও কল্যাণপুর ও শ্যামলী কাউন্টার থেকে যাত্রী তোলে। এসব কাউন্টারেও এখন যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করে আছে বাসের জন্য।

রংপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও সিরাজগঞ্জ রুটে বেশ কিছু বাস ছাড়ার কথা ছিল গত রাত ১২টায়। কিন্তু এই বাসগুলো ছেড়েছে ভোর ছয়টার পর।

নওগাঁ রুটে শ্যামলী পরিবহনের সকাল সাতটার বাস ছেড়েছে বেলা সোয়া ১০টায়। রাজশাহী রুটে হানিফ পরিবহনের ভোর ছয়টার বাস ছেড়েছে সকাল ১০টায়।

গাবতলীতে শ্যামলী কাউন্টারের ম্যানেজার আবদুর রশিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের গাড়ির সমস্যা নেই, রাস্তার সংকট। চন্দ্রা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যানজট নিয়ন্ত্রণে আনসার বাহিনী মোতায়েন থাকলেও পুলিশ কম। এ কারণে এবার সমস্যা প্রকট হয়েছে।

মোশাররফ হোসেন যাবেন মেহেরপুর। তার শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ার কথা সকাল সাতটায়। কিন্তু সাড়ে ১০টার সময়ও বাস আসার নাম নেই। কখন ছাড়বে ঠিক নাই। কিছুক্ষণ পর পর মোশাররফ কাউন্টারে গিয়ে জানার চেষ্টা করছেন তার বাসের কথা। প্রতিবারই তাকে শুনতে হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের তীব্র যানজটের কথাই।

রায়হান যাবেন কুষ্টিয়া। তার বাস ছাড়ার কথা সকাল আটটায়। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বাস দেরি, এখন বসারও জায়গা পাচ্ছি না। মালের বস্তার ওপর বসে আছি।’

মৌসুমি আক্তার যাবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ। স্বামী আর তিন বাচ্চা নিয়ে এসেছেন। পথে দেরি হবে এই আশঙ্কা থেকে রান্না করে খাবার নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু যে অবস্থা তাতে এই খাবারে কুলাবে কি না, তা বুঝতে পারছেন না তিনি।

মৌসুমির বাস ছাড়ার কথা ছিল সকাল আটটায়। কিন্তু সাড়ে ১০টার সময়ও কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে, বাস আছে চন্দ্রায়। এখন দুপুরের আগে বাস ছাড়তে না পারলেই বাঁচেন মৌসুমি।

এই গৃহিনীর মত অন্য যাত্রীরাও অনেকেই রান্না করে যারা খাবার নিয়ে এসেছেন বাইরে খাবেন না বলে, তাদের অনেকেরই খাবার শেষ হয়ে গেছে। ইচ্ছার বাইরে এখন বাইরে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে বা হবে তাদের।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031