সরকার বাংলাদেশে চাকরিবাজারে বিদেশিদের যেন নিয়োগ দিতে না হয়, সে জন্য কারিগরি শিক্ষায় জোর দিতে চায়। ব্যবসায়ীয়দের সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আশা করছেন, দক্ষ জনশক্তি পেলে বিদেশিদেরকে আর নিয়োগ দিতে হবে না।

কারিগরি শিক্ষায় ছাত্র বাড়লে দেশে বেকারত্ব কমার পাশাপাশি বিদেশেও কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি তাদের মজুরিও বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।

রবিবার রাজধানীতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ড যৌথ গবেষণার একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই লক্ষ্যের কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তার কারণে এখন কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে।

‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশে মাত্র এক শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হতো কারিগরিতে। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশে।’

‘আগামী ২০২০ সালে এ হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিদেশির চাকরি করা এবং দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সাধারণ শিক্ষায় ছাত্রদের বেশি আগ্রহ থাকায় এটা হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘দেশে ভুরি ভুরি বিবিএ, এমবিএ তৈরি হচ্ছে। আসলে এসব দরকার আছে কি-না? তার কোনো গবেষণা নেই।’

‘আমাদের প্রায় এক কোটি প্রবাসী শ্রমিক রয়েছেন, তারা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান তার চারগুণ এখানে বিদেশি শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা উন্নতি হলে, আমাদের এই দীনতা থেকে উত্তরণ ঘটবে।’

সম্প্রতি বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বেকার সমস্যায় ভোগা বাংলাদেশে হাজার হাজার বিদেশি চাকরি করছেন। শুধু ভারতীয়রা বছরে ৫০০ কোটি ডলার বেতন পাচ্ছেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর কারণ দক্ষ জনশক্তির অভাব।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির প্রতিবেদন বলছে, দেশের ২৪ শতাংশ তৈরি পোশাক কারখানাতে বিদেশি কর্মীরা কর্মরত।

ব্যবসায়ী নেতা ফজলুল হকের মতে কারিগরি শিক্ষার অভাব, ইংরেজি জ্ঞান কম থাকা। তিনি বলেন, ‘একদিকে অ্যামপ্লয়াররা প্রফেশনাল লোক খুঁজছেন, দেশের ভেতরে পাচ্ছে না। অন্যদিকে বিদেশি প্রফেশনালরা আমাদের এখানে কাজ করছেন, আমাদের জায়গাগুলো তাদের দিয়ে দিতে হচ্ছে, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রতি মানুষের অনীহা রয়েছে কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রকৃত অর্থে কারিগরিতে যারা লেখাপড়া করেছে তারাই বেকারের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে।’

‘দক্ষতা ছাড়া চাকরির নিশ্চয়তা নেই। সবাই এখন দক্ষতা খোঁজে।’

শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় সাধারণ শিক্ষায় অন্তত একটি বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

২০৩০ সালে ১২৮ মিলিয়ন শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলাই বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষার প্রতি সরকার জোর দিচ্ছে। আগামীতে অষ্টম শ্রেণিতে একটি করে ট্রেড কোর্স চালু করার বিষয় ভাবছে সরকার।’

প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে নারীবান্ধব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পুরুষের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় নারীদের সামনে এগিয়ে নিতে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে নারীদের জন্য নারীবান্ধব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট করা হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এরইমধ্যে চারটির কাজ শেষ, সেখানে লেখাপড়া শুরু হয়েছে।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031